SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

তেজস্ক্রিয় পদার্থ হতে α,β,γ রশ্মি নির্গত হয়। একটি সর্ব প্রথম কে আবিষ্কার করেন?

Created: 2 years ago | Updated: 11 months ago

     ফরাসি বিজ্ঞানী হেনরি বেকেরেল ( 1852-1908) তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কার করেন। ১৮৯৬ সালে তিনি দেখতে পান যে, ইউরেনিয়াম যৌগের নিকটে রাখা ফটোগ্রাফিক প্লেট কুয়াশাচ্ছন্ন বা ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। তিনি অনুধাবন করেন যে, ইউরেনিয়াম থেকে নির্গত বিকিরণের দরুন ফটোগ্রাফিক প্লেট ঝাপসা হয়েছে। এ ঘটনাকে বলা হয় তেজস্ক্রিয়তা বা তেজস্ক্রিয় ক্ষয়। তিনি দেখান যে, ইউরেনিয়ামের নিউক্লিয়াস থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অবিরত এই বিকিরণ নির্গত হয়। এই বিকিরণ অতি উচ্চ ভেদন ক্ষমতাসম্পন্ন এবং সাধারণ আলফা কণা বা বিটা কণা। আলফা কণা বা বিটা কণা যে কণাই নির্গত হোক না কেন আদি (parent) মৌলটি (জনক) সম্পূর্ণ নতুন মৌলে (জাতক) রূপান্তরিত হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত না একটি স্থায়ী মৌলে রূপান্তরিত হয় ততক্ষণ এই রূপান্তর প্রক্রিয়া চলতে থাকে। তেজস্ক্রিয়তা ঘটনাটি স্বতঃস্ফূর্ত এবং সম্পূর্ণভাবে প্রকৃতি নিয়ন্ত্রিত। এটি তাপ, চাপ, বৈদ্যুতিক বা চৌম্বক ঘটনা দ্বারা প্রভাবিত হয় না।

  পরবর্তীকালে রেডিয়াম, পোলোনিয়াম, থোরিয়াম, অ্যাকটেনিয়াম ইত্যাদি ভারী মৌল থেকে তেজস্ক্রিয় রশ্মি বা কণার নির্গমন আবিষ্কৃত হয়। যে সকল মৌল থেকে তেজস্ক্রিয় রশ্মি নির্গত হয় তাদেরকে তেজস্ক্রিয় মৌল বলে।

     তেজস্ক্রিয় মৌল থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভেজস্ক্রিয় রশ্মি নির্গমনের ঘটনাকে বলা হয় তেজস্ক্রিয়তা। 

    একক : তেজস্ক্রিয়তার এস. আই একক বেকেরেল (Bq)। প্রতি সেকেন্ডে একটি তেজস্ক্রিয় ভাঙ্গন বা ক্ষরকে এক বেকেরেল বলে।

  1 Bq = 1 decay s-1

আগে কুরী (Ci) নামে তেজস্ক্রিয়তার একটি একক ব্যবহৃত হতো।

  1Ci = 3.7 x 1010 decay s-1 = 3.7 x 1010 Bq

তেজস্ক্রিয়তা একটি নিউক্লিয়ার ঘটনা : 

  তেজস্ক্রিয় মৌল থেকে তেজস্ক্রিয় রশ্মি নির্গমনের ফলে আদি মৌলের নিউক্লিয়াস একটি নতুন মৌলের নিউক্লিয়াসে রূপান্তরিত হয়। তেজস্ক্রিয় রশ্মিসমূহ নিউক্লিয়াস থেকেই নির্গত হয়ে মৌলের রূপান্তর ঘটায়, তাই তেজস্ক্রিয়তা একটি নিউক্লিয়ার ঘটনা। 

তেজস্ক্রিয় পদার্থের প্রকারভেদ

তেজস্ক্রিয় পদার্থ দু ধরনের। যেমন,

ক. প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয় পদার্থ

খ. কৃত্রিম তেজস্ক্রিয় পদার্থ (Artificial radioactive substance

ক. প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয় পদার্থ : 

  কোনো প্রাকৃতিক পদার্থ হতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে তেজস্ক্রিয় রশ্মি নির্গমনের ঘটনা ঘটলে সেসব পদার্থকে প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয় পদার্থ বলে। যেমন- ইউরেনিয়াম (U), রেডিয়াম (Ra), থোরিয়াম (Th) প্রভৃতি মৌল হতে যে তেজস্ক্রিয়তা ঘটে তা প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তা। এসব মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা 82- এর চেয়ে বেশি।

খ. কৃত্রিম তেজস্ক্রিয় পদার্থ : 

  কোনো মৌলকে কৃত্রিম উপায়ে তেজস্ক্রিয় মৌলে পরিণত করলে সেসব মৌলকে কৃত্রিম তেজস্ক্রিয় মৌল বলে। কোনো মৌলকে নিউক্লিয় বিক্রিয়ার মাধ্যমে বাইরে থেকে অতি উচ্চ বেগ সম্পন্ন কোনো কণা দ্বারা আঘাত করলে সেটি তেজস্ক্রিয় মৌলে পরিণত হয়। এদেরকে কৃত্রিম তেজস্ক্রিয় মৌল বা রেডিও আইসোটোপ বলে। যেমন, ,  ইত্যাদি।

তেজস্ক্রিয় রশ্মির প্রকারভেদ (Types of Radioactive Rays)

বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা তিন রকম তেজস্ক্রিয় রশ্মি আবিষ্কার করেন। ১৮৯৯ সালে রাদারফোর্ড এবং ১৯০০ সালে ভিলার্ডের পরীক্ষা থেকে এসব রশ্মির সন্ধান পাওয়া যায়। তেজস্ক্রিয় রশ্মি তিন প্রকার ।

১। আলফা রশ্মি, ২। বিটা রশ্মি এবং ৩। গামা রশ্মি।

চিত্র :৯.৬

 

   মাদাম কুরীর পরীক্ষা:

     নিম্নোক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে মাদাম কুরী তিন প্রকার রশ্মির অস্তিত্ব নিঃসন্দেহে প্রমাণ করেন। তিনি একটি সীসার ব্লকের সরু লম্বা ছিদ্র করে ঐ ছিদ্রে রাখলেন রেডিয়ামঘটিত তেজস্ক্রিয় পদার্থ। ছিদ্র হতে সামান্য দূরে লম্বালম্বিভাবে একটি ফটোগ্রাফিক প্লেট রাখা। হলো যাতে রশ্মি প্লেটের ওপর পড়তে পারে। তারপর সমগ্র ব্যবস্থাকে আবদ্ধ করলেন একটি বায়ুনিরোধী প্রকোষ্ঠে এবং পার্শ্বের সাহায্যে ভিতরের বাতাস বেরা করে নিলেন এবং চৌম্বকক্ষেত্র প্রয়োগ করলেন। ফটোগ্রাফিক প্লেট পরিস্ফুটিত করে পাওয়া গেল তিনটি! পৃথক স্থানে তিনটি দাগ। চুম্বকের প্রভাবে এক জাতের রশ্মি গেল সামান্য বেঁকে, অপরটি গেল উল্টোদিকে অপেক্ষাকৃত অধিক বেঁকে। তৃতীয়টি মোটেই বাঁকেনি (চিত্র ৯.৬)।

     চৌম্বকক্ষেত্রের অভিমুখ, কণাগুলোর গতির প্রারম্ভিক অভিমুখ এবং বিচ্যূতির অভিমুখ থেকে সহজে বোঝা গেল প্ৰথম রশ্মিটি ধনাত্মক আলফা রশ্মি, দ্বিতীয়টি ঋণাত্মক বিটা রশ্মি এবং তৃতীয়টি নিরপেক্ষ গামা রশ্মি। নিঃসরণ থেকে আরো বোঝা গেল আলফা রশ্মি বিটা রশ্মির তুলনায় অধিক ভারী।

তেজস্ক্রিয়তার বৈশিষ্ট্য :

(১) যে সকল মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা 82-এর বেশি, কেবল সে সকল পরমাণু প্রাকৃতিকভাবে তেজস্ক্রিয় হতে পারে। এর ব্যতিক্রমও আছে যেমন  তেজস্ক্রিয় মৌল।

(২) তেজস্ক্রিয় পদার্থ সাধারণত আলফা, বিটা ও গামা —এই তিন প্রকারের তেজস্ক্রিয় রশি নিঃসরণ করে। 

(৩) তেজস্ক্রিয়তা একটি সম্পূর্ণ নিউক্লিয়ার ঘটনা এবং এর মাধ্যমে নিউক্লিয়াসের ভাঙনের ফলে একটি মৌল আর একটি নতুন মৌলে রূপান্তরিত হয়।

(৪) তেজস্ক্রিয়া একটি স্বতঃস্ফূর্ত ও উদ্দেশ্যবিহীন ঘটনা এবং এটা চাপ, ভাপ, বিদ্যুৎ বা চৌম্বকক্ষেত্রের ন্যায় বাইরের কোনো প্রক্রিয়া দ্বারা প্রভাবিত হয় না।

আলফা, বিটা ও গামা রশ্মির ধর্ম

আলফা রশ্মির ধর্ম :

১. আলফা রশ্মি ধনাত্মক আধানযুক্ত। এর আধান 3.2 x 10-19 C

২. এ রশ্মি চৌম্বক ও তড়িৎক্ষেত্র দ্বারা বিচ্যুত হয়।

৩. এ রশ্মি তীব্র আয়নায়ন সৃষ্টি করতে পারে।

৪. এর ভর বেশি হওয়ায় ভেদন ক্ষমতা কম ।

৫. সাধারণ চাপ ও তাপমাত্রার কয়েক সেন্টিমিটার বায়ু বা ধাতুর খুব পাতলা পাত দ্বারা এর গতি থামিয়ে দেওয়া যায়।

৬. এ কণা ফটোগ্রাফিক প্লেটে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

৭. এ রশ্মি জিঙ্কসালফাইড পর্দায় প্রতিপ্রভা সৃষ্টি করতে পারে।

৮. এ কণা প্রচণ্ড বেগে নির্গত হয়

৯. এটি একটি হিলিয়াম নিউক্লিয়াস ।

১০. এ কণার ভর হাইড্রোজেন পরমাণুর চারগুণ।

বিটা রশ্মির ধর্ম :

১. এ রশ্মি ঋণাত্মক আধানযুক্ত। এর আধান 1.6 x 10-19 C

২. এ রশ্মি চৌম্বক ও তড়িৎক্ষেত্র দ্বারা বিক্ষিপ্ত হয়।

৩. এ রশ্মি অত্যন্ত দ্রুত নির্গত হয়। এর দ্রুতি আলোর দ্রুতির শতকরা 98 ভাগ হতে পারে।

৪. এ রশ্মি অতি উচ্চ দ্রুতি সম্পন্ন ইলেকট্রনের প্রবাহ। এর ভর ইলেকট্রনের সমান অর্থাৎ 9.1 x 10-31 kg.

৫. ফটোগ্রাফিক প্লেটে এর প্রতিক্রিয়া আছে।

৬. এ রশ্মি প্রতিপ্রভা সৃষ্টি করতে পারে।

৭. এর ভেদন ক্ষমতা আলফা রশ্মির চেয়ে বেশি এবং এটি 1 cm অ্যালুমিনিয়াম পাত ভেদ করতে পারে।

৮. গ্যাসে যথেষ্ট আয়নায়ন সৃষ্টি করতে পারে।

৯. কোনো পদার্থের মধ্য দিয়ে যাবার সময় এই রশ্মি বিক্ষিপ্ত হয়।

গামা রশ্মির ধর্ম : 

১. এ রশ্মি আধান নিরপেক্ষ।

২. এ রশি তড়িৎ ও চৌম্বকক্ষেত্র দ্বারা বিচ্যুত হয় না।

৩. এর বেগ আলোর বেগের সমান অর্থাৎ 3 x 108ms-1

৪. আলফা ও বিটা রশ্মির চেয়ে এ রশ্মির ভেদন ক্ষমতা খুব বেশি। এটি কয়েক সেন্টিমিটার সীসার পাত ভেদ করে যেতে পারে।

৫. স্বল্প আয়নায়ন ক্ষমতা সম্পন্ন।

৬. এ রশ্মি প্রতিপ্রভা সৃষ্টি করতে পারে।

৭. ফটোগ্রাফিক প্লেটে এ রশ্মি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

৮. এর কোনো ভর নেই।

৯. এটি তাড়িতচৌম্বক তরঙ্গ।

১০. এর তরঙ্গদৈর্ঘ্য ক্ষুদ্র, তাই শক্তি খুব বেশি ।

Content added || updated By

Related Question

View More